বই পড়া (পার্ট-০১) | তারিকুজ্জামান তনয়
বই পড়া (পর্ব-০১)
এভাবে ভেবে দেখেছেন কখনো (আমি একটা উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করি)
আপনি বলতে থাকুন- এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়, সাত, আট, নয়… যতটা ইচ্ছা ততটা..।
আবার এভাবে পড়ুন- সাত, পাঁচ, নয়, তিন, ছয়, দুই, এক, আট…যতটা ইচ্ছা ততটা..।
এবার আসি বাস্তবতার নিরিখে-
বাস্তবতার নিরিখে ধারাবাহিক নয় এমন অগোছানো সংখ্যাগুলোই বেশি কাজে আসে।
এবার আসুন বই পড়ার বিষয়ে-
বইতে বেশ কিছু সুশ্রী, সুন্দর ও গোছানো শব্দ লেখা থাকে। কিন্তু এ সকল সুশ্রী-সুন্দর শব্দ বা বাক্য দিয়ে কী জীবন চলে? -জীবন চলে না! তবুও বই পড়তে বলা হয়। এমনকি অনেক সংখ্যক মানুষ বই পড়ে।
কথা হলো, সত্যিকার অর্থেই কি বই বাস্তবতার নিরিখে নয়? এর ভেতরকার সুন্দর শব্দ ও বাক্যগুলো জীবনের কোনো কাজে আসে না?
আমার এমন প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি! তবুও থাকুক প্রশ্নটা।
তবে এমন প্রশ্ন করা যায়ই- দিন শেষে অথবা কাজের শেষে এক চিলতে প্রশান্তি চাই, চাই তো?
সে প্রশান্তির জন্য অবশ্যই গোছানো সাধু(অর্থাৎ অত্যন্ত পবিত্র) কথাতে ফিরতেই হবে। অন্যথায় তুমি অথবা তোমার সংস্পর্শে আসা কেউ না কেউ অবশ্যই হতাশায় নিমজ্জিত হবে। যা তোমাকে চূড়ান্তভাবে কাঁদাবে।
আমি মনে করি- “তোমার হাতে বই থাকা মানে ওই সূর্যটাকেই হাতে পাওয়া। বাস্তবিক অর্থে সবকিছুকে হাতে পাওয়া। বইয়ের প্রভাবে তোমার হৃদয়ের বন্ধ জানালা খুলে যাবে। ফলে নিজেও পথ দেখবে আবার অন্যকেও পথ দেখাতে পারবে। কি পরিবার, কি সমাজ বা তোমার সংস্পর্শে আসা কাউকে।”
জীবনের কি প্রয়োজন আছে, আর কি প্রয়োজন নেই তার হিসেব তুমি কিংবা আমি কবে থেকে জানতে পেলাম? এর সহজ উত্তর দুটো। এক, যখন থেকে আমরা প্রয়োজন বোধ করতে শুরু করেছি। আর দ্বিতীয়টি হলো, প্রয়োজন নেই তবুও অন্য কারও থেকে সময়ে-অসময়ে শুনতে পাওয়া বা দেখার মাধ্যমে। প্রশ্ন হলো, প্রয়োজন বোধ হলে তা কিভাবে পাওয়া যায় বা ভোগ করা যায় সেটা কিভাবে বোঝা গেলো? অথবা অন্যের কাছ থেকে যা শোনা বা দেখা হয়েছে, সে কোথা থেকে তা শোনতে বা দেখতে পেয়েছে?
হ্যাঁ, এটা ঠিক যে পরস্পরের কাছ থেকে মৌখিকভাবে শুনে শুনে অথবা পরম্পরার থেকে দেখে দেখে। সত্যিই কি এই কথাগুলো বিশ্বাস করো? বা কিঞ্চৎ পরিমাণ বিশ্বাস করো কি না?
কোন এক মহাসমুদ্রের উপারে কোনো একজন নাবিক পৌঁছে গিয়েছে। তাহলে এপারে যারা আছে তারাও কি প্রথম নাবিকের মতো অনুমান করে পৌঁছে যাবে? তা না হয় হলো। আচ্ছা, প্রথম নাবিক সমুদ্র পাড়ি দেবার পথে যে যে শিক্ষা পেল তা অন্য কোনো নাবিক কিভাবে জানতে পারবে? হ্যাঁ, এ ক্ষেত্রেও মেনে নিলাম যে, ঐ প্রথম নাবিকের কাছ থেকে শুনে শুনে অভিজ্ঞ হয়ে উঠবে বা বিপদসংকুল স্থান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হবে? –সত্যিই কি তা পারা যায়?
তবে এরকম প্রশ্ন করা তো যায়- ক্ষেতের ফসল যদি গোছিয়ে বা বেঁধে সাবধানে বা যত্নসহকারে না রাখা হয়, তবে সে ফসল লোকসানের মুখ দেখে। তাই নয় কি?
নদীর এপার-ওপার সংযোগ করতে হলে সেতু তৈরি করা প্রয়োজন। এটা তো মানি। আমি, তুমি বা আমরা সেতু তৈরী করে না গেলে আমাদের পরের প্রজন্ম কি করে নদী পার হবে? মূর্খতার ফলে অনেক উচ্চ পরিবারকেও কাঁদার নিচে তলিয়ে যেতে দেখেছি। সময়ের চাকার তলে পড়ে পিষে মিশে যেতে দেখেছ। তা তোমারও অনুমান করতে পারো। আমার মতে, ‘বই হলো যুগ থেকে যুগান্তরের দৃঢ় সেতু। লিপিবব্ধ শব্দ বা বাক্যগুলো আছে বলেই এ সভ্যতার আশীর্বাদ তোমাকে; ঠিক এই আমাকে মজবুত করে তুলেছে।’
এসো বই পড়ি।
–
বই পড়া(পার্ট-০১)
তারিকুজ্জামান তনয়
শেওড়া, ২০২৫
প্রবন্ধ : সময় ক্রয়, জীবনময় , সময়, কর্ম এবং মানুষ
ছোটগল্প : গোলাপের হাসি ফুটেছে , দৌবযোগ , একরাতের অমলের স্বপ্ন