গোলাপের হাসি ফুটেছে

কেউ লাফ দিয়ে গাছে উঠে; আবার কেউ শুয়ে শুয়ে। এর মানে দাঁড়ালো, যার কপালে সুখ আছে, সেই ব্যক্তি তেমন কোনো কাজ না করে থাকলেও সুখ তার পায়ে তলাতে এসে ধরা দেয়। অর্থাৎ সামান্য চেষ্টার দ্বারা বিরাট সফলতা অর্জন করেন। আবার এমন অনেকেই আছেন যারা ঘাড়-মুড় ভেঙ্গে কাজ করে গেলেও সফলতার লেশমাত্রও ভুল ক্রমে তার আশেপাশে এসে দেখা দেয় না। সূর্যের আলো সবাইকে তাপ দেয় বটে; কিন্তু সবার জন্য সমান উপকারী নয়।
জীবন চলার এ গতিপথে আপন মানুষের সাথে আর কতটুকুই সময় কাটানো যায়/হয়! যেমন ধরুন, আপনি চাকরিজীবী। দশ ঘণ্টা অফিস। দিনের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে পাক্কা দশ ঘণ্টা আপনার থেকে অফিস কিনে নিয়েছে। তাছাড়া যাওয়া-আসাতে সময় ব্যয় তো আছেই।
ঘুম, খাওয়া-দাওয়া সহ আরও অন্যান্য কাজের সময়গুলোকে বাদ দিলে আমরা দেখতে পাই পরিবারের জন্য খুব সামান্য সময় পাই বা দিতে পারি! আর যতটুকু সময় পাওয়া যায় তার মাঝে কতই না মান-অভিমান জড়িয়ে থাকে।
আসলে স্ত্রীর স্বামী; সন্তানের বাবা হয়ে থাকাটা কঠিন কাজ। অবশ্য কেউ কেউ এ বিষয়টাকে দারুণ উপভোগ করে। পৃথিবীকে তাদের কাছে স্বর্গ। উপভোগ্য।
এর উল্টো পিঠটাও আছে।
আমরা আমাদের চলার পথে দেখি বেশির ভাগ মানুষ অসুখি। ঠিক, তা নয় আসলে। সবাই কিছু সময়ের জন্য সুখী; আবার কিছু সময়ের জন্য অসুখী। আসলে কেউই সব সময়ের জন্য ভালো/সুখী হয় না কিংবা দুঃখী হয় না।
বসন্তের খোলা হাওয়া চারদিকে বইছে। শহুরে পরিবেশে এর বিশেষ কোনো প্রভাব নেই। যতটুকুই বা আছে তা এই মাতাল করা বাতাসের কাছেই, আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কাছেই। মূলত এর আমেজ জমে উঠে গ্রাম-গঞ্জে, পথেঘাটে, বনবাদাড় আর পাখ-পাখালিদের কুহু-কুজন।
সেদিন বসন্তের শনিবার ছিল। ঢাকা শহর। জমলুল আর সামিন কাজের ফাঁকে রাস্তায় বেরিয়েছে। ওরা দুইজন একই অফিসে চাকরি করে।
জমলুল যেমন সহজ সরল; ঠিক তেমনি তার আক্ষেপ ভরা মন আছে। যেখানেই তার মন মতো হয় না, সেখানেই তার অন্যকে দোষ দেবার একটা প্রবল প্রবণতা লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে সামিন বেশ স্বাভাবিক স্বভাবের। সে, সব দিক খেয়াল রেখে চলতে পারে। চতুর নয়; তবে রসিক বটে।
-“ভাই, গতকাল যা একটা ছবি দেখলাম। পুরোনো দিনের ছবি। কী চমৎকার! কত যে রুচিশীল! কি তার ডায়ালগ!” সামিন খানিকটা কৌশলী হয়ে জমলুল কে বললো।
জমলুল কিছুটা আবেগী হয়ে উঠলো এবং স্মৃতিচারণ করলো। কয়দিন আগেই এ নিয়ে ভীষণ মন খারাপ হয়েছিলো।
জমলুল ও শায়লার মাঝে ঝগড়া হয়েছিলো। দুজনার ঝগড়ার সময় তাদের ছেলে-মেয়েরা বাবার পক্ষ না নিয়ে মায়ের পক্ষ নিয়েছে। সব মিলিয়ে জমলুলের খুব মন খারাপ।
সেদিনের সেই ঝগড়ার সুবাদে জমলুল তার হাতে থাকা স্মার্টফোন থেকে গভীর রাত অবধি ছবি দেখেছে। উত্তম কুমার এর ছবি ‘পথে হলো দেরি’।
⇒১
-ঠিক বলেছেন ভাই। আগের ছবিগুলো কত সুন্দর ছিল। সেখানে আবার উত্তম কুমার বলে কথা! বাংলা উচ্চারণগুলো যেন তার মুখের পটুতায় লেগে আছে। ডায়ালগগুলো কত যে সহজ-সরল।
-পরে, একাই দেখলেন?
-পোড়া কপাল আমার।
-ধুর ভাই। ছবিতে দেখা একটা ডায়ালগ ভাবিকে শুনিয়ে দিতেন। খুশি হয়ে যেতো।
-আমি কী আর উত্তম কুমাররে ভাই। শেষে কপালে ঝাড়ুর বাড়ি জুটে যেতো।
-কী বলেন!
-বউ আমার, কিন্তু আমার মতো নয়। তার মতো করে আমার চলতে হয়। বুঝলেন।
-বুঝলেন কী ভাই, বউকে মাঝে মাঝে জোর করতে হয়। ওরা জোর করা খুব পছন্দ করে। সেদিন বউকে ডেকেছিলাম; কিন্তু শুনছিল না। পরে হাত ধরে টেনে এনে পাশে বসালাম। বললাম, আকাশে মেঘ জমলে প্রেমিকাদের বাইরে ছুটে আসতে হয়, বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। ছুটে এসে বৃষ্টিতে ভিজলে মন আরও প্রেমে পূর্ণ হয়ে ওঠে।’
-পরে..!
-কিছু তো বকবক করলোই; তবে তার আড়ালে একটা আনন্দ মিশে ছিল। আমি ঢের বুঝতে পেরেছিলাম। জানেনই তো, বকবক করা ওদের স্বভাব। আবার এও মেনে নিতে হয়, এতে করে দ্বিগুণ সুবিধা ফিরে পাওয়া যায়।
-ভাই, আপনি পারেনও বটে।
-একটা ছবি ছেড়েছিলাম। আপনার মতো আমিও উত্তম কুমার ভক্ত। ছবির নাম ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। উঠে চলে যাওয়ার জন্য তার যে কত বাহানা ছিল।
-রাগ করেনি।
-দারুণ হাসির ছবি।। পরে সেও আনন্দ পেয়েছে।
-তাই!
-হুম। একা একা কী ছবি দেখা যায়! এর ফাঁকে একবার চা খেয়েছিলাম। ও বানিয়ে দিয়েছে। ভাই, এ জীবনটা আর কদিনের! এ সব কিছুর জন্যই তো বিয়ে করা। তাই না? নিজে নিজেই তো চলতে পারি। কিন্তু নাহ! একটু গল্প করা, একটু কথা বলা, খাবার, কাপড়চোপড়, একটু চাকচিক্য, পোলাপাইনের পড়ালেখা দেখা। এই-তো! এসবের জন্যই সঙ্গী!
-ভাই, আপনি বেশ সুখে আছেন। সন্তান, বউ, সংসার নিয়ে মজায় আছেন।
-তা বলতে পারেন।
-আপনারই কপাল-রে ভাই।
-বউদেরকে মাঝে মাঝেই গোল দিতে হয়, মিঞা!
-কেমনে গোল?
-মেয়ে মানুষ আবেগী হয়- এই আর কি! তারা তো রাগ করবেই। তাদের রাগের মাঝে যদি একটু গোল দিতে পারেন তাহলেই দেখবেন রাগের বিষয় ভুলে গিয়ে আপনাকে মেনে নিয়েছে। তাই মাঝে মধ্যেই গোল দিতে হয়।
-ভাই, তাহলে আমাকেও গোল দেওয়া শিখিয়ে দেন।
-অবশ্যই। কি বলি ভাই, স্ত্রী লোক বড্ড আজব প্রকৃতির। মাঝে মাঝে গোল দেয়াতেও কাজ হয় না। রাতে এক সাথে মুভি দেখলাম। আবার সকালে উঠতেই সামান্য বিষয় নিয়ে কথা বাড়িয়েছে। পরে আমিও রাতে দেখা ছাবির (সাড়ে চুয়াত্তর) একটি ডায়ালগ শুনিয়ে দিলাম।
-কি ডায়ালগ ভাই? কি..
-‘বউ মানে কি? বউ মানে গাছতলা। সারাদিন খেটে পুড়ে এসে গাছ তলায় আশ্রয় নেয়। তুমি হলে খেজুর গাছ। গাছ আছে, ছায়া নেই।’
-শুনে বউ রাগ করেনি?
-আরে ভাই! এখনকার বউরা রাগই করে না! একটুও না। বরং চটাং করে হেসে উত্তর কাটলো ‘তো বেশ তো। ছায়া আছে এমন গাছতলায় বসলেই পারো।’
-তারপর!
⇒২
-আমিও বলে দিয়েছি ‘বেশ তো, এবার ছায়া আছে এমন গাছ খুঁজে বেড়াবো।
-ভাই, আমি বউ দেখে ভয় পাই। এতো কথা বললে আমাকে ফেলে চলে যাবে।
-পুরুষ মানুষ! একটু রসিক হওয়া চাই। সারাদিন পর কর্তা বাসায় ফিরে যদি আলাদা আনন্দঘন আবহ তৈরি না করে তবে বউ তো অমন হবেই।
-তা ঠিক বলেছেন।
-স্ত্রীদেরকে সারাদিন ঘরে কাজ করতে হয়। শুয়ে-বসে দিন পার করতে হয়। অনেকটা বন্দি জীবন! দিন পার করা সত্যিকার অর্থেই কঠিন। আমরা ছেলেরা পারতাম না। পারতেন না, ভাই? তাই আমাদের একটু রসিক হতেই হয়।
-তাই বলছেন।
-আচ্ছা, একবার ভাবুন তো, আমরা এই যে এক সাথে কাজ করি। মাঝে মধ্যেই একঘেয়েমি চলে আসে না? তখন যদি হঠাৎ করে কেউ হাসির কিছু বলে বা একটু হেসে নিলে কেমন ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। যায় না- বলুন?
-হুম যায় তো।
-তাহলে! আবার দেখুন, কিছু মানুষ সুস্থ থাকা সত্ত্বেও একা একাই হাসে। বলেন তো এর কী কারণ?
-কি কারণ?
-স্ত্রীর সাথে ঘটানো কোনো মজার ঘটনা মনে করে সে হাসে। এমন হতে পারে না?
-পারে।
-ধরুন, স্ত্রী পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছে, এমন। আপনি পাশ থেকে পিঁড়িটা সরিয়ে দিলেন। বউ জানতেই পেলো না।
-ধুর ভাই। স্ত্রী যদি ব্যথা পায়। তখন তো আবার তারে টানতে হবে।
-এমন হতে হবে তা নয়! তবে দারুণ কিছুও তো হতে পারে, তাই না?
-তা হতে পারে।
-একটা উদাহরণ মাত্র। অন্য কিছুও তো ঘটতে পারে। যেমন ধরুন, আপনি হাতের মুষ্টি শক্ত করে ধরে ঘরে ঢুকলেন। আর ঘোষণা দিলেন আজকের এ গোপন পুরষ্কার টা শুধু মাত্র স্ত্রীর জন্য। সন্তানরাও যাতে ভিড় করে এমন করে বললেন। আরে ভাই, মেয়ে মানুষ তো। গিফটের প্রতি তাদের দুর্বলতা থাকেই। মুখে কথা না বললেও মনে মনে খুশিও হব; আবার মনের ভেতর কৌতূহলও জাগবে। বাসার সবাই যখন কৌতূহলবসতঃ চিল্লাপাল্লা শুরু করে দিবে তখন একটু নাটকীয় ভঙ্গিতে স্ত্রীকে ডেকে পাশেই বসাবেন। আর শর্ত দিবেন, বউ ছাড়া বাকি সবাইকে চোখ বন্ধ করতে। এতে কেউ রাজি হবে আবার কেউ রাজি হবে না। সন্তানরা মায়ের কোলে বসার চেষ্টা করবে। আপনি আরও রসিক হবেন। সন্তানরা তো আর চোখ বন্ধ করবে না, এটা জানা কথা। তবে চোখ বন্ধ কারার বাহানা করবে। আপনি এই সুযোগে বউয়ের হাতে উপর আপনার সেই গিফটবন্দি মুষ্টিটা খুলবেন।
-কী গিফট?
-লজেন্স মশাই! লজেন্স রাখবেন!
জমলুল ও সামিনের মাঝে যে অবস্থা দাঁড়ালো তা দেখবার মতো।
জমলুল- ভাই আমারে আরও শেখান আমি কীভাবে বউয়ের সাথে ভাব জমাবো।
সামিন- পয়সা ছাড়া দাওয়াই এ কোন ফল হয় না।
-মশকরা নয়! বলেন। আমরাও সুখী পরিবার হতে চাই।
-আরে ভাই, এমনিতেই সুখী আছেন। শুধু সুখ গুলো খোঁজে নিতে হয়। ভালো আছেন। চারিদিকে নানান অসঙ্গতির মাঝে সংসার যে টিকে আছে; দিন শেষে দু’মোঠ খাবার সামনে এনে আসে। এও বা কম কীসের!
-তা ভাই ঠিক বলেছেন। আপনার ভাবির বাড়তি কোনো ঝামেলা নাই। শুধু রাগটা একটু বেশি। একবার যদি রাগ করে বসে তাহলে আর মেঘের গর্জনেও থেমে যায় না। এমন ব্যবহার করে যেন আমাকে চেনেই না।
-রাগি মানুষের মন ভালো হয়।
-মন ভালো আর কীভাবে বুঝি। তখন কথা বললে তো বুঝবো তার মন নরম কী না!
-আপনি একটা কাজ করুন। ফ্রি ফ্রি একদিন গোল দেন। একটু প্রশংসা করে দেখেন।
-তা কেমনে?
⇒৩
-ধরুন আপনি একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠেছেন। স্ত্রীরা সাধারণত ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু করে দেয়। আপনি বেশ আরাম আয়েশ করে দেরিতে ঘুম থেকে উঠে বিছানার উপর ঠিক সাহেবি কায়দায় বসবেন।
-তারপর!
-আপনি খুব সুরেলা কণ্ঠে ঠিক কোকিলের মতো শান্ত সুরে ভাবির নাম ধরে ডাক দিবেন। নামের আগে বা পরে একটা বিশেষণ যুক্ত হলে মন্দ নয়।
-কেমন বিশেষণ?
-ঐ তো ধরুন…আছে না এমন ‘হ্যাঁগো, ওগো, যাদু, সোনা আরও কত কী!
-এ আমার দ্বারা হবে না।
-না হলে গোল দেওয়া শিখবেন কি করে?
-মুশকিলে ফেলে দিলেন। আমি পারবো না। হবে না আমার দ্বারা।
-ভালোবাসি কথাটি স্ত্রীর মুখে শোনা কী এতোই সোজা কাজ মশাই! মাঝে মাঝেই যাত্রাপালা করতে হয়। তা না হলে সং রস পাবেন কি করে!
-আমার দ্বারা হবে?
-হবে মানে! পারতে হবে।
জমলুল বড় একটা দম নিয়ে আবার বললেন
-ঠিক আছে। তবে না পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।
-তা না হয় দিলাম। কিন্তু চেষ্টা তো করা চাই।
-হ্যাঁ! তা পারবো। সব ভবিতব্যের ইচ্ছা!
-বউ কে ডাকবেন। প্রথম ডাকে আসবে না। কিন্তু স্বামীর সুরেলা কণ্ঠ শুনে তার মনের মাঝে এক অন্যরকম দোলা অনুভব করবেই। বুঝেন না, মেয়েদের বুক ভাঙ্গে তো মুখ ফুটে না!
-তারপর!
-আবার ডাকবেন।
-না শুনলে? না আসলে?
-তখন আরও কয়েকবার ডাক দিবেন। আসবেই। এমন সাতসকালে আর কোন দিন এমন সুর করে, আদুরে কণ্ঠে ডাকেননি তো? তাই ভালো লাগার পাশাপাশি কৌতূহলবশত আসবেই।
-আচ্ছা এলো। তারপর?
-কিছুটা স্ত্রীর পক্ষ নিবেন। সরাসরি গোল দিতে নেই আবার।
-কেমনে কি?
-সংসারের একটা স্বাভাবিক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। মানে, বিষয়টার ব্যাপারে আপনি একটু সিরিয়াস থাকবেন।
-শেষে যদি হালকা হয়ে যায়!
-হালকা হয়ে গেলে ওভাবেই চালিয়ে দিবেন।
জমলুলের সাদা মন বড় গোলমেলে হয়ে উঠেলো। কিছুটা স্থির হয়ে পড়লো। সামিন এ বিষয়টা বুঝতে পেলো। এর পরের কথাগুলো আর এতো জমল না।
-ভাই, ব্যাপার টা ভেতর থেকে আসতে হয়। আসলে শিখিয়ে দেয়া যায় না।
-তবুও, পথ চেনা থাকা ভালো।
এবার সামিন বুঝতে পেলো জমলুল এ বিষয়টা বেশ গুরুত্বসহকারে নিয়েছে।
-একটা কথা বলি ভাই। যদি ভাবি একবার হেসে দেয়, তাহলেই মনে করবেন পটে গিয়েছে। আরে ভাই অন্য কেউ তো নয়। নিজের বউ। একটু রসিক হলে মন্দ কী।
জমলুলের মনের মধ্যে সামিনের এ রসিক কথাগুলো হালকা হয়ে ধরা পড়লো বটে; তবে এ যে পুরোপুরি মজা করা তা মেনে নিতে তার এতটুকুও বাঁধ সাধলো না। তবুও কথাগুলো, কথার রসবোধটুকু, নাটকীয় ঘটনাবলি এবং এর ফলাফল নিয়ে মাথা ঘুরপাক খেতে লাগলো। জমলুল শেষ এই
ভাবনা ছেড়ে দিলো এই ভেবে যে, তার দ্বারা হবে না। তাছাড়া, পাছে যদি খাপছাড়া হয়ে যায় আবার! তখন তার মাথা কাটা যাবে।
এরপর তিন দিন পার হয়ে গেছে। আবার সামিন আর জমলুলের মাঝে কথা হলো।
⇒৪
-ভাই, ওদিকটার কী অবস্থা?
-কোন খবর নাই।
-বলেছিলাম না, বিনামূল্যের পরামর্শ দিলে পরামর্শের মূল্য থাকে না মশাই।
-ভাই কয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম তো। হবে না আমার দ্বারা।
সামিন হেসে বললো- মন থেকে চেষ্টা করতে হয়।
-ভাই ভয় করে।
-বউকে?
-হ ভাই।
-এটা কোনো কথা?
-কী করার। ভয় লাগে।
-দৌড়ের প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন।
দু’জনের হাসির ছটা এমন দাঁড়ালো যে আর তা বর্ণনা করে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
-আবার বলতেছেন যেহেতু; আগামীকাল আমি আবার চেষ্টা করবো।
-বউয়ের সাথে দুই-একটা মজার ঘটনা থাকুক জীবনের গল্প হয়ে।
-আচ্ছা।
-আজ সকালের একটা ঘটনা বলি।
-আচ্ছা।
-ম্যাডাম ভাত রান্না করতে গিয়ে ভাত পোড়া ধরিয়েছেন।
-তারপর?
-আচ্ছা বলেন তো, ছেলেরা কত বড় বড় রান্না করে। তবুও তো পোড়া ধরে না।
-সত্যিই তো। বিপদে পড়লে আমিও তো রান্না করি। পোড়া ধরে না।
-তাই তো আপনার ম্যাডামকে বলেছি ‘মেয়েরা কাজে অদক্ষ হয়।’
-রাগ করেনি? কিছু বলেনি?
-তা তো বলেছে।
-তারপর!
-সুযোগ পেয়েছি একটু মজা করার; তা কি আর ছেড়ে দেওয়া যায়!
-এখন কী অবস্থা?
-মেয়েরা ধরাসাই হলে মনে মনে খুশি হয় ভাই-ও।
জমলুল হাসলো বটে; কিন্তু কি রকম যেন উদাস হয়ে উঠলো। তার উদাসীন চোখটা সামিনের চোখেও ধরা পড়লো।
এরপর আরও ক’দিন গোলমেলে দিন পার হলো। ঘোলাটে মন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলো। জমলুলের মনের কুয়াশা আরও কেটে গেলো। সে আরও প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠলো যে, তার স্ত্রীকে তার জব্দ করা চাই। চাই।
সেদিন সকাল বেলা কোলাহলমুক্ত ছিল। ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে স্ত্রী শায়লা বাসায় ফিরেছে মাত্রই। একলা পরিবেশে মনের কথাগুলো আরও তরুণ হয়ে উঠলো। জমলুল অত্যন্ত বিনয় সুরে আদুরে কণ্ঠে শায়লার নাম ধরে ডাক দিলো।
তেমন কোনো সাড়া এলো না। জমলুল বুঝে নিলো এতে কোন কাজ হয়নি। সে আবার শুয়ে পড়লো। এমন সময় শায়লা রুমে ঢুকে বললো- কিছু বললে?
না মানে হ্যাঁ এমন দুই-একটা অস্ফুট আওয়াজ করে উত্তর কাটলো- আজ অফিসের তাড়া আছে। সকাল সকাল বেরোতে হবে।
⇒৫
-‘ঘুম থেকে উঠো আগে।’ এই বলে চট করে সরে গেলো।
সকাল সকাল এমন ঘুঙরি দিলো যে তা দেখে জমলুলের রাগ হলো।
পুরো সকাল আর দুই জনের মাধ্যে কোনো কথা হলো না। জমলুল অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
তার মনটা খুবই ব্যথিত হয়ে উঠলো। সে নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করছে, সেই সাথে তার নিজের কাছ থেকে উত্তর খুঁজে চেষ্টা করছে।
জীবন থেকে অনেক কিছু ছেড়ে দিয়ে অনেক কিছু দেখতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও হয়ত তাই ঘটেছে। ঘটে চলছে। আসলে আমার ঘরে সিনেমার আবহ তৈরি হবে না আর। তাছাড়া আমার দ্বারাও হবে না। এমন কথাগুলো মনের মাঝে আওড়াতে আওড়াতে জমলুল অফিসে চলে এলো।
সন্ধ্যা নেমেছে। জমলুলের মন আর তাজা হয়ে উঠলো না। মনমরা মনমরা রইলো। অফিসের বড় স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে জমলুল আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরছে। আজ সে বাসে না উঠে হেঁটে হেঁটে রওনা দিয়েছে।
বাসায় ফেরার পথে ফুলের তুড়া নিয়ে ছোট্ট একটা মেয়ে সেঁধে সেঁধে সুন্দর সুন্দর কথা বলছে আর তার মনোযোগ নিতে চাইছে। সেই সুর শোনে জমলুলের মনে এক কোমল পুণ্য বোধ জেগে উঠলো। একশত টাকা দিয়ে ফুলের তোড়াটি কিনে নিয়ে বাসায় ফিরলো।
ঘরে প্রবেশ করতেই সেই ফুলের তোড়াটি ছেলে-মেয়ে ছিনিয়ে নিয়ে ছোটাছুটি করতে লাগলো। এর কয়েক মিনিট পর ফুলের তোড়াটি ভেঙে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিলো। জমলুলের তেমন কিছুই বলার বা করার রইলো না। অন্যদিকে সায়লা ছেলে-মেয়েকে বকা দিতে লাগলো।
ঘুমানোর পূর্বে স্ত্রী সায়লার মাঝে এক আশ্চর্য রকম পরিবর্তন খেয়াল করল। শায়লা কেমন যেন রসিক লতার মতো উচ্ছল। আজ জমলুলের সাথে বেশ আয়েশে কথা বলছে। তাতে জমলুলের বেশ ভালো লাগলো। কিন্তু সেই সাথে জমলুলের মনে মধ্যে সন্দেহের উদ্রেক হলো। এর আগেও একবার এমন সব মিষ্টি কথা বলে দশ হাজার টাকা নিয়ে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। তারপর জনা গিয়েছে, সে টাকা তার এক বাল্যকালের বান্ধবীকে ধার দিয়েছে। আজ তার মনের মধ্যে এমন কোন লক্ষণ খেয়াল হচ্ছে কি না তাই জমলুল ফিরে ফিরে তীক্ষ্ন বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে এবং চোখের প্রখর দৃষ্টির উপর আস্থা রেখে আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল।
নাহ! আসলে তেমন কিছুই না। আসলে আজ সায়লার মনটাই ভালো।
-আজ অফিসের এক ভাই জোর করে একটা গান শোনালো। হিন্দি আমি তেমন বুঝি না। তবু কয়টা লাইল ঠাহর করে উঠলাম। (অত্যন্ত লাজুক সুরে স্ত্রীকে জমলুল বলল)
সায়লা আর কোনো কথা বললো না।
জমলুল নিজ থেকেই বলেলো:
‘তবে দেখতে এমন যে,
এক কুমারিকে দেখতে এমন যে-
যেমন গোলাপের পাঁপড়ি খোলা,
যেমন কবির কল্পনা,
যেমন আলোকিত সূর্য,
যেমন বনের…
-অফিস বাদ দিয়ে এইসব নেকামি চলে? কাজের সময় এগুলো আমার পছন্দ না।
এই বলে হন করে চলে গেলো। ফিরে এসে আবার বললো
-এইগুলো করা মানুষের মন নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই না! কালো মানুষ তোমার পেছনে লেগেছে। কয়দিন ধরে ভূতে পেয়েছে তোমার, বুঝতেছি। উড়ু উড়ু ভাব তার!
⇒৬
কিছু বলার পূর্বেই শায়লা আবার অন্য ঘরে চলে গেলো।
পাশের রুম থেকে গোংড়ানো রাগী কণ্ঠে আরও কিছু বকবকানি শোনতে পেলো কিন্তু জমলুল তার প্রত্যুত্তরে কোনো জবাব দিলো না। বরং তার রাগ হলো। ভীষণ রাগ হলো। কী এমন দায় পড়েছে তার। আর কেনই বা তার অন্যের শেখানো বুলি আওড়াতে হবে। সবার জীবন বা পরিবার সমান হয় না।
পরেরদিন সকাল বেলা জমলুল গোসল সেরে পরিপাটি হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে রইলো। অন্য দিনগুলোতে এমন সময় এক ধরনের অস্ফুট আওয়াজ করে উপস্থিতি জানান দেয়। কিন্তু না! আজ জমলুল বেশ শান্ত। বলা যেতে পারে সে আজ বড্ড লাজুক। শায়লা খাবার নিয়ে এসে কী ভেবে যেন স্ফীত হাসি ছেড়ে দিলো। খাবারের প্লেট দিয়ে মুহূর্তেই চলে গেলো। পানি নিয়ে আবার ফিরে এলো।
জমলুলের মন কেমন যেন টন করে উঠলো। সে যেন এক সিনেমার আবহ খুঁজে পেলো। সে পেছনের গ্লানি ভুলে গেলো। তবে সে উচ্ছ্বসিত হতে পারলো না। সেই সাথে লাজুক ভাবের একটা অবয়ব নিজে থেকে সরাল না।
শেষে যখন অফিসের জন্য চলল তখন দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে শায়লা বললো- “ছেলে-মেয়েরা আর মাছ খেতে চাচ্ছে না। ওরা কদিন ধরে গরুর মাংসের কথা বলছিলো।”
-(জমলুল) “ছেলে-মেয়েদের নাম ভাঙানোর দরকার কী! বললেই হয়, তোমার খেতে ইচ্ছে করেছে।”
এ কথা বলে জমলুল আর পেছন ফিরে তাকালো না। যা হওয়ার তাই হবে। কিছু বলতে পেরেছে এই বেশ।
শায়লা রেগে গেলো নাকি কিছুই হলো না, তা জমলুল বুঝতে পেলো না। তবে এমন কথা শায়লাকে কখনো বলেনি। এমনকি শায়লাও কখনো শুনেনি। আজ তার এমন কথা বেরুলো কেন, তাই সে অফিসে বসে বসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে ভাবছিল।
জমলুল তার পাশের জনের কাছে একটু ঘেঁষে দিয়ে গিয়ে বললো- ‘ভাই, শেষ কবে সিনেমা দেখেছেন?
লোকটা হেসে বললো- ‘কেনো ভাই?’
-আরে, বলেন না ভাই!
-আমি ভাই ইদানীং কালের ছবি দেখি। এ ছবিগুলো আপনি দেখেনি।
-আচ্ছা বলেন তো, নায়ক যদি তপ্ত গরমের মাঝে নায়িকাকে বলছে- ‘কী সুন্দর আকাশ। ঐ নীল ছুঁয়ে উদাসীন সাদা মেঘ উড়ে চলছে। তোমাকে সম্বোধন করে পাখিরা গাইছে। দক্ষিণা সমীরণ আজ বড্ড বেশি উদাসীন। আমার হৃদয় নিংড়ানো প্রেমটুকু শুধুই তোমার জন্য।’ এ কথাগুলো বললে স্ত্রী লোক কী খুশি হবে?
-সিনেমাতে তো হয় দেখি।
-আরে সিনেমায় নয়। বাস্তবে হয়? আপনি এমন কিছু কি কাউকে বলেছেন?
-না তো। বলা হয়নি।
জমলুল মুচকি হাসি দিয়ে বললেন- ভাবিকে বলে দেখবেন। দেখবেন ভাবি অনেক খুশি হবে।
জমলুলের এমন আহ্বান লোকটার মনে ধরল কিনা বুঝা গেলো না, তবে সেও হাসলো।
আজ আবার জমলুল একটি ফুলের তোড়া নিয়ে বাসায় ফিরলো। সেই একই কাণ্ড ঘটে গেলো। তাদের ছেলে মেয়ে আবার বাবার কাছ থেকে ফুলের তোড়া কেড়ে নিয়ে হই-হুল্লোড় করে খেলতে লাগলো। এক সময় তোড়া ছিঁড়ে গেলো। আর ঘরময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়লো।
এসব হেয়ালিপনা দেখে শায়লার যতটা না ছেলে-মেয়েদের উপর রাগ হলো, তার চেয়ে বহুগুণ রাগ হলো স্বামীর উপর।
⇒৭
জমলুল অতি ভদ্র স্বামীটির মতো জড়োসড় হয়ে বসে রইলো। শায়লার অমন টসটসে মুখ-খানা বিজলির মতো দম ছাড়া গনগনে আগুন হয়ে উঠলো। এঘর-ওঘর ছুটে ছুটে ফুল আর পাপড়িগুলো কুড়িয়ে নিয়ে মেঝে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে নিলো।
রাত হয়ে গিয়েছে। সবারই ক্ষুধা লেগেছে; কিন্তু শায়লাকে বলার সাহস পাচ্ছে না কেউ। এই ব্যাপারটা শায়লা বুঝতে পেরেও কোনো কথা বলছে না। বরং সে রাগ দেখিয়েই আছে।
ঘর গোছানো শেষে সবাইকে খাবার দিল। সবাই চুপচাপ খেয়ে নিল। শেষে, সবাই যে যার ঘরে শুইতে গেল। শায়লা শুইতে এলো বেশ পরে। স্ত্রী লোকের কাজের পরিধি শেষ ঝাড়ু পর্যন্ত গুছিয়ে রাখা অবধি।
জমলুল তখনো শুয়ে পড়েনি। ঘরময় পায়চারি করছে। শায়লা আঁড় চোখে দেখতে পেলো জমলুল অফিস ব্যাগের কাছে যাচ্ছে আবার ফিরে আসছে। কখনো হাতে মুষ্টিবন্ধি করছে, পরক্ষণেই ছেড়ে দিচ্ছে। একরকম অস্বস্তি তার চারপাশে ভিড় করছে। শায়লা তখনো নিশ্চুপ। শুধু আঁড় চোখে মাঝে মধ্যেই জমলুলকে দেখে চলছে।
জমলুল দেখলো যে, শায়লা দ্রুত পায়ে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে। হয়ত কোনো কাজের কথা মনে পড়েছে তার। শায়লা আবার ফিরে এল। শায়লা ফিরে এসে দেখলো জমলুল বিছানার একপাশে বসে দু’হাত পেছনের দিকে রেখে লুকিয়ে রেখেছে। শায়লা একটা কিছু টের পেলো, কিন্তু তা জমলুলকে বুঝতে দিলো না। বরং শায়লা তার চোখে-মুখে একটা বিরক্তির/রাগের আভা প্রকাশ করে রইলো। বিধাতা ছাড়া আর কেউ জানে না এ সময় শায়লার মনের ভেতরে কি খেলে চলছে!
জমলুল এবার বিছানা থেকে উঠে গিয়ে লাইট নিভিয়ে দিলো। তখনো শায়লার কোনো পরিবর্তন এল না। জমলুল শুইতেও এলো না। খানিকটা দূরে জমলুল দাঁড়িয়ে আছে তা শায়লা স্পষ্টতই বুঝতে পেলো। শায়লা হঠাৎ করে বুঝতে পেলো জমলুল হাঁঠু গেড়ে বসেছে। শায়লা চমকে গেলো। কাছে গেলো। দেখলো জমলুল মাথাটাকে নিচু করে হাঁটুগেড়ে বসে আছে। তার কোনো নড়চড় নেই। স্বামীর এমন ভীমরতি দেখে শায়লা ভয় পেয়ে গেলো। শায়লা, জমলুলের নাম ধরে ডাক দিলো। কিন্তু না; জমলুলের তেমন কোনো পরিবর্তন এলো না। শায়লা তড়িঘড়ি করে লাইট জ্বালল। শায়লা আবার জমলুলের সামনে এসে দাঁড়ালো। কিছু বলবে এমন সময় জমলুল মাথা উঁচু করে একটা মৃদু হাসি দিলো। তারপর পেছন থেকে হাত দু’খানা সামনে এনে একটা টকটকে লাল গোলাপ শায়লার ঐ সুস্রী পবিত্র অবয়বের প্রতি তুলে ধরলো। নিজেকে পুরোটা রূপে সঁপে দিলো। শায়লার অন্তরটা ভরে উঠল কতগুলো পূণ্যে আলোর কিচিরমিচিরে। তৎক্ষনাৎ শায়লার মনে হলো, সে তার স্বামীকে পূর্বের ন্যায় আরও নিজের করে পেয়েছে। পেয়েছে সম্পূর্ণ রূপে। সম্পূর্ণ আপন করে। পূর্ণ অধিকারে। এটাই তার জীবনের সার্থকতা। এটাই তার স্রষ্টার প্রতি পূর্ণ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। এটাই তার দম্ভ। এটিই তার পবিত্র প্রেমের মঙ্গল বাতি। আর এটাই তার অধিকার।
শায়লা তার আনন্দ ধরে না রাখতে পেরে জমলুলের মুণ্ডু টাকে আঁকড়ে ধরে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। খুশিতে জমলুলের দু’চোখ বেয়ে জল বেরোলো। সত্যিই এ আনন্দ ঐ উপরে থাকা স্রষ্টার বেহেশত পর্যন্ত বিস্তৃত। এ আনন্দ, ফেরেশতাদের দুয়াধ্বনি তুলা আনন্দ।
দরজার ওপাশ থেকে দরজায় আঘাতের শব্দ ভেসে এল। সেই সাথে পিচ্চিরা ডেকে ফিরল- ‘বাবা! মা! বাবা! মা!’
শায়লা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। এবার পুরো ঘরময় একটা হাসির আনন্দ ছটা যেন ঝলকায়ে উঠলো।
পরেরদিন অফিসে এসে জমলুল যেন সেই তরুণ ছেলেটি। সব কথা ও কাজের এক অন্যরকম ছন্দ মেশানো আছে যেন। তার কপালের ওই ত্বক থেকে আলো জ্বলজ্বল করে উঠছে। যে তার সাথে কখনো কথাটিও বলেনি, তারা আজ তাকে নানান খোঁচা দিয়ে এক অন্যরকম আমেজ তৈরি করছে। এভাবেই আজ জমলুল অত্যন্ত সুখী।
দু’দিন পর শুক্রবার এলো। নামাজে যাওয়ার পথে সামিনের সাথে আবার দেখা হলো। খুশিতে জমলুল করমর্দন করলো। কাঁধে কাঁধ মিলালো।
-(সামিন) কী মশাই! গোলাপের হাসি ফুটেছে?
-(জমলুল) গুরু, কাজ হয়েছে।
-(সামিন) এবার কিছু খাওয়ান। মিষ্টিতে কাজ হবে না। ঝাল খাওয়াতে হবে, ঝাল!
-(জমলুল) শর্ট টাইম ড্রইং, ইফ লং টাইম সাসটেইন; দেন আরেক শুক্রবার…।
[এমন আনন্দঘন হোক আমাদের প্রতিটি পরিবার। তবেই আমার এ গল্পের সার্থকতা রবে ..]
⇒৮
ছোট গল্প: গোলাপের হাসি ফুটেছে
কলমে: তারিকুজ্জামান তনয়
সেপ্টেম্বর’২০২৪
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments