জৈষ্টি মাসে আমের দাওয়াত

আজ জৈষ্টি মাসের পনেরো তারিখ,

এখনো আমার গাছে আম পাকেনি।

শশুর মশাই ফোন করেছিলেন,

কথা প্রসঙ্গে শোনা গেলো- আম পেকেছে তাদের।

তবুও বলেনি- এসো জামাই, এসো ওদের সাথে করে।

সেদিন মেয়েটাও ওর নানুর বাড়ির কথা বললে।

গিন্নিও বলল- আমাদের যে গাছটার বড়ো বড়ো আম,

হলদে রঙা, রসালো, মিষ্টি আর সুঘ্রাণ;

সেই গাছের গো আমগুলো পেকেছে।

ছোটবেলায় কি যে মজা হতো,

ঝড় এলে সবাই দৌড়ে যেতাম!

গাছে ডালে ওঠে বড়দা যেই না ঝাঁকুন দিতো-

বড়ো আমটা খুটে নিতাম। জানো, অমনি খেতাম।

 

তাই শোনে নিচু গলায় বললাম- 

‘তাই বুঝি! তখন হয়ত খেয়েছো বেশি?’

-‘হুঁ, অনেক অনেক। খেতে খেতে শুকিয়ে যেতাম ঢের।’

 

আরও এক সপ্তাহ গেল। 

শশুর মাশাইয়ের সাথে আলাপ হলো।

এদিক-ওদিক সব কথা। 

মাঝে, সময় করে বললাম- খুকি আম খেতে বেশ পছন্দ করে।

আচ্ছা– সুঘ্রাণ, হলদে রঙা আমগুলো বুঝি শেষ?

 

শশুর বললেন- আর বলো না, সেকি আর থাকে! প্রায় শেষ।

বাড়ির সবার, আত্মীয়-স্বজনের টার্গেট ঠিক ওই একটি গাছেই।

 

আবার বললাম- ওই গোছের আমের স্বাদের কথা বলে

আপনার মেয়ের চোখ যে জলে ভাসে। 

 

শশুর সাহেব অট্ট হেসে শোধালেন- শোনো জামাই,

আমার দাদার হতের গাছ।

এর স্বাদ গ্রামজুড়ে সবার মুখে মুখেই।

 

আরও এক সপ্তাহ গেলো। 

আমার আম গাছের তলে গিয়ে 

থোকা থোকা আম দেখি আর ভাবি,

যাক কিছুদিন, নাই বা গেলাম আর শশুর বাড়ি;

তখন আমার গাছেই থাকবে ভুড়িভুড়ি পেঁকে।

তখন, একটি খাবো মিলে মিশে, আর তিনটি তিনজনার,

এক বাটি আম করবো কাড়াকাড়ি- ইচ্ছেমতো খেয়ে!

সকালে খেয়ে আবার আরেকটা খাব এক সকালেই,

দুপুরে খাব ছত্রিশবার; বিকেলে হলে কথাই নাই,

রাত্রিতে খাব বারবার। ঠিক ঠিক…এভাবেই।

 

পরের দিনের সকাল বেলা, শোকনো পাতার আঁড়ে,

ঝড়ে পড়া পাঁকা আম খানি রোদের আলোয় হাসে!

ডেকে তুলে বললাম খুকী ওঠে আয়, আয় এদিকটায়,

গিন্নী হেসে কয়- ওমা! আম পাকা শুরু করেছে এবার!

 

বলে দাও বাপের বাড়ি, দাওয়াত দেওয়া হবে;

আম-কাঁঠালের ছলে আবার সবার দেখা হবে।

 

গিন্নি কহে- শোনো, 

বাপের বাড়ির কাঁঠাল পেকেছে সেই গাছটার,

বিয়ের প্রথম বছর খেয়ে বলেছিলে বাহ! বাহ! আবার।

 

বললাম শেষে আচ্ছা তবে, বেলের কি দোষ,

কাকের কানে খবর গিয়েছে বেল পেঁকেছে খুব!

 

এমন করে কথা কেন, এমন সুরে কেন,

বাবার সময় হলেই আসবেন 

সেদিন দেখবে তোমায় আদর করে কত!

 

আরেক সপ্তাহ পর, শশুর মাশাইয়ের এলো কল;

সব কথা হলো। প্রায় কেঁটেই দিবেন, এমন সময়

-‘বাবা, আম পেকেছে আমার গাছে, কাঁঠালও তাই;

কচি ঘাসের ডগা খেয়ে গরুর দুধ বেড়েছে তাই!

শত ব্যস্তার মাঝেও একটা দিন নিয়ে, নাতিন দেখতে আসুন,

ওরা বলছিল আপনাদের কথা ফিরেফিরে।’

 

-‘আচ্ছা তবে আসবো ক্ষণ, দেখি তোমার শাশুড়ি কি বলেন,

নাতিনের মুখখানা দেখিবার স্বাধ বহু দিন ধরেই।’

 

পরের শুক্রবার হলো তারিখ, আসবে ওরা সবে-

নানু-নানি, মামা-মামি, মামাতো ভাই-বোন সকলেই।

গিন্নি অতি খুশি বটে, মেয়েটারও বেশ আমোদ;

আমি আছি ওই একরকম আর কী, খুশি খুশির প্রমোদ।

জৈষ্টি মাসে আমের দাওয়াত

তারিকুজ্জামান তনয়

১১ জুলাই’২০২৫, ঢাকা।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments