মেঘদূত

মহাকবি কালিদাসের ‘মেঘদূত’ মহাকাব্যে যক্ষের যে বিরহ গাঁথা মেঘের কাছে প্রকাশ পেয়েছে তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক রচিত ‘মেঘদূত’ প্রবন্ধে কিছুটা অন্য ভাব প্রকাশ পেয়েছে। কালিদাসের বিরহ রস আর রবীন্দ্রনাথের আক্ষেপ- এ দুয়ের সংমিশ্রণে আমার এই ‘মেঘদূত’ সনেটটি সৃজন করা হয়েছে…
আজ শনি; কাল রবি। অভিসাপ পেয়ে
কে কোথায় যে হারায়! মেঘ, দূত হয়ে
দেশান্তরে ভেসে বার্তা লয়ে যায়। হায়
যক্ষ! পবিত্র মিথুন আসঙ্গ যে ধায়
নির্বাসিত রামগিরি পর্বত রণ-পা!
মিনতি অম্বুদ, প্রাণ কুশ অপরূপা!
মেঘ চিনিবা- পর্বত ও নদী-নগরী;
জম্মু বন, পারাবত, উদয়ন হেরী!
জীবন মনে উজ্জ্বল প্রেরণা- প্রকৃতি।
সব আছে নেচে নেচে, প্রাণের আকুতি-
জাগিয়ে আর না শুনি! সবই তো জড়,
আত্মভোলা ও হেয়ালি! নর হৃদ বড়-
সঞ্জীবিত রসে ব্যগ্র- ফিরে পেতে প্রেম!
ক্ষয়ের আঘাতে ক্ষত! ‘অচেনার ধূম্।’
সংস্কৃত ভাষার মহাকবি কালিদাসের ‘মেঘদূত’ মহাকাব্যে যক্ষ তার প্রিয়ার কাছে মেঘকে দূত/বাহক রূপে যে বেদনা/প্রেমের উচ্ছল প্রাণ রস পাঠাত, সে রকম বেদনা/প্রেম রস আমরা প্রত্যেকেই আমাদের হৃদয় মাঝে যাপন করে থাকি। বিভিন্ন পাপ/কর্মের ফলে আমরা এই মাত্রই যা ছেড়ে দিলাম, তা আর সে রূপে ফিরে আসে না বা পাওয়া যায় না। আমরা যেন ভালোটা বুঝেও ক্ষতির ক্ষয়ের মাঝেই জীবন খুঁজি।
মেঘদূত সনেটঃ
প্রথম অংশ- অষ্টকঃ ক,ক/খ,খ/গ,গ/ঘ,ঘ
দ্বিতীয় অংশ- ষষ্টকঃ ঙ,ঙ/চ,চ/ছ,ছ
অষ্টকঃ
অভিসাপ পেয়ে যক্ষ যখন রামগিরি পর্বতে; তখন বর্ষার নতুন মেঘকে আকাশে ভেসে চলা দেখে তার আসঙ্গ উল্লাস জাগে। কিন্তু, তার অর্ধাঙ্গী থাকে কৈলাশ পর্বতের পাদদেশে- যার অবস্থান সেখান থেকে অনেক দূরে। তাই তার জেগে উঠা বিষাদ ও প্রেম সদাশয়তা মেঘের কাছে বার্তা পাঠায় এবং বার্তা নিয়ে যাবার পথের বর্ণনা দেয়।
যাবার পথে- উপবন গুলোতে কেয়া-ফুলের বেড়া আছে, জাম গাছে কালো জাম আছে (সে জামগুলো কালো মেঘের মতো দেখতে), ঘরের চালে পায়রাগুলো দল বেঁধে বসে আছে; সিপ্রা নদী, বেত্র নদী, রেবা নদী আছে; উজ্জয়িনী নগরী, অবন্তী নগরী (যেখানে বৃদ্ধরা উদয়ন ও বাসবদত্তার গল্প করেন), বিদিশা নগরী আছে; দেবগিরি পর্বত, বিন্ধ্য পর্বত, কৈলাশ পর্বত আছে।
ষষ্ঠকঃ
যক্ষ জানে, যে প্রকৃতি তাকে আকুল করে তুলেছে তার কাছে বার্তা পাঠলেও তার অর্ধাঙ্গিনীর কাছে পৌঁছবে না।
“বিধুর আমি, তাই, অথবা করুণায়, কিংবা বন্ধুতাসূত্রে,
জলদ, কারো, তুমি আমার প্রিয় কাজ, মিটাও অনুচিত যাতনা;
প্রাবৃটে দেশে-দেশে ঋদ্ধিশালী হ’য়ে বিহার কোরো তুমি তারপর-
কখনো বা ঘটুক তোমার বিদ্যুৎ- প্রিয়ার ক্ষণেকের বিচ্ছেদ।”
পুরুষ হৃদয় প্রেম সরসে ভরা। তারা প্রকৃতির খোঁচায় পুলকিত হয়ে উঠে। সুরেলা দিন গুলোকে ফিরে পেতে কাতর হয়ে উঠে/আকুল হয়ে উঠে।
কালিদাস এর ‘মেঘদূত’ মহাকাব্যে অর্দ্ধাঙ্গীর কাছে যাবার আকুলতা প্রকাশ পেয়েছে; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘মেঘদূত প্রবন্ধে’ পূর্বের ভারত বর্ষের সেই সৌন্দর্য (প্রকৃতির, জায়গার নাম) এখন আর নেই- সেই আক্ষেপ প্রকাশ পেয়েছে; আর ‘মেঘদূত সনেট’-এ ক্ষয়িষ্ণু জগতের সব ক্ষয় হয়ে যায়, প্রতিনিয়তই সময়/স্বাদ কে হারিয়ে ফেলি, যা ফিরে পাওয়ার/কাছে যাওয়ার কোন পথ নেই। প্রতিনিয়ত ফেলে যাই আর ফিরে পাবার জন্য আকুল হই শুধু।
—**—
সনেটঃ মেঘদূত
তারিকুজ্জামান তনয়
১৪ই মে’২০২২খ্রি.
আমরা কেনো যেন পরিবর্তন হই এবং আশেপাশের সবকিছুকে পরিবর্তন করি বা ভূমিকা রাখি…