প্রস্থানে
অথবা আমি যেদিন আর থাকব না-
আযানের প্রিয় সুর ঐ মসজিদে
ধ্বনিত হবে, কিন্তু আমি শুনতে পাব না।
ঘুমের চেয়ে নামায উত্তম ডাকেন মমতায়,
বিছানা হারাম হয়ে যায় মোয়াজ্জিনের বার্তায়।
তবুও নিথর দেহ খাঁটের পরে শুয়ে,
ঐ মধুর ধ্বনি আজ বাজে না কানে।
অথবা আমি যেদিন আর থাকব না-
বাবা, মোরে ডাকলে আর শুনব না- এ ভদ্রতা নয়,
বাবা নেই আজ ভয় নেই এই দৈন্যতায়।
আমার ছোট বেলা বাবা ছিলেন তরুণ
তার ঘাড়ের পরে উঠিয়ে মোরে কত না করতেন আমোদ।
গম্ভীর হতে দেখলেই গাল দিতেন মলে;
আজ অসাড় দেহখানি মোর খাঁটের পরে সুয়ে,
এই দেখে তিনি কেমনে সইত।
অথবা আমি যেদিন আর থাকব না-
চির দুঃখী মা আমার; তাই তো–
বেঁচে আছেন দেখতে ছেলের দৈন্যতা।
অধিকারের বলে গোসসা করে সারাদিন খাইনি,
পাগলি মা আমার- অনাহারী থেকে প্রতিশোধ নিলেন, অবাক এ ভক্তি।
অঝোড়ে বিলাপে কাঁদিস নারে শীতল আঁচল তুলে,
কানে বাজলে কান্নার সুর আমি সইতে পারবো নারে।
অথবা আমি যেদিন আর থাকব না-
লাল টুকটুক সোনার মতন মুখ ছোট্ট শাড়ির ভাঁজে–
‘প্রথম দেখাতেই পাগল করেছিলে’- তুমিও তাই বলে ছিলে।
বাইশ বছরের সংসারে ঝগড়া বাঁধিয়েছে কত,
ততোধিক ভালোবেসেছ নিবিড় যত্ন কতশত।
যুদ্ধসম সাহস দিতে সঙ্গী ছিলে মোর প্রাণের,
খাঁটের পাশে কাঁদ কেন আজ? যাত্রা জানাও বিদায়ের।
অথবা আমি যেদিন আর থাকব না-
গুল্ম বৃক্ষের আমি ছিলাম খুঁটি, অবলম্বন, শক্তি;
বিদায় জানাতে কষ্ট হচ্ছে-রে সোনা এই তো নিয়তি।
দুঃখীর দুঃখ, শনির অনিষ্ট, অন্তঃরমের দহন,
আগলে রেখেছি মোর সর্বস্ব দিয়ে, চোখে নিয়ে স্বপন।
তাজা প্রাণ বলির মত ছটফট করো না-রে সোনা,
দায়িত্ব অধিকার শেষ আজ কানে যাবে না শোনা।
অথবা আমি যে দিন আর থাকব না-
ক্ষমা করিস-রে তোরা মোর জীবনের অর্ধেক,
বন্ধু বর্গ, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী আরও শতেক।
কখনও দায়িত্বের বলে, কখনও হেলার ছলে,
মধুর-অমধুর যা হোক অনিষ্ট রেখে ক্ষমা করে দিলে।
কোন কথা না বলে থাকব খাটে শুয়ে,
তার পাশে সওয়াল জপে স্মৃতিতে বুক ভাসাবে।
প্রস্থানে
তারিকুজ্জামান তনয়
–
‘প্রস্থানে’ কবিতার নেপথ্যেঃ এক বুড়োর মৃত্যু ভাবনা নিয়ে লেখা আমার এই-‘প্রস্থানে’ কবিতাটি। ভোরে ফযর নামায পড়ে সূর্য ওঠার দৃশ্য দেখতেছেন। এমন সময় মৃত্যুর বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে তাঁর মনে ভাবনা জাগে। এইসব নিয়ে লেখা কবিতাটি। ধর্ম, বাবা, মা, বউ, সন্তান এমনকি বন্ধু, আত্মীয় ও প্রতিবেশীর অবস্থান লিখনিতে ওঠে এসেছে।
২৪ অক্টোবর’ ২০১৮,বাসায়,
সকাল-৯টা, ময়ম.।